রোজার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বেড়ে যায় গরুর মাংসের দাম। সেই থেকে এখন পর্যন্ত চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।
শনিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত তিন সপ্তাহ ধরে গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রমজান মাসকে কেন্দ্র করে বেড়েছে তেল, ডাল, চিনিসহ সকল প্রকার ফলের দাম। বেড়েছে মুরগির দামও। এসব প্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবারই প্রথম এত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।
হাতিরপুল বাজারে মাংস কিনতে আসা এমদাদুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘রোজার শুরুতে দাম বেশি বলে গোশত কিনিনি। ভেবেছিলাম, কয়েক রোজা গেলে দাম কমবে। অথচ রোজার এক সপ্তাহ যাওয়ার পরও মুরগি বা গরুর গোশতের দাম এখনও কমেনি। আদৌ কমবে কিনা, জানি না।
আরেক ক্রেতা ব্যাংকার জহিরুল বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার দাম বেশি হবে মনে করে বাজার করিনি। আজ এসে দেখি বাজারে জিনিস পত্রের দাম একই রকম বাড়তি। ভেবেছিলাম, দুই কেজি গরুর মাংস কিনব। দাম বললো, ৭০০ টাকা করে। ছেলে মেয়েদের আবদার থাকা সত্ত্বেও তাই মাংস কিনতে পারলাম না।
তিনি বলেন, ‘দোকানিরা মাংসের একদাম বলে সবাই- ৭০০ টাকা। তার উপর এক কেজি মাংসের মধ্যে ৩০০ গ্রাম দেবে হাড়। কিছু বলাও যায় না। কেনো গরুর মাংসের দাম এত বাড়লো, কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও কোনো উদ্যোগ নেই।
প্রায় ২০-২৫ দিন থেকে গরুর মাংসের দাম কেনো ৭০০ টাকা? এ প্রশ্নে মাংস ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া বলেন, ‘বাজারে গরুর দাম অনেক বেড়েছে। এ কারণে মাংসের দামও বেড়েছে। এখন তো ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছি, তারপরও ক্রেতা কম। অথচ শবে বরাতের সময় ৭৫০ টাকা করেও বিক্রি করেছি। সেসময় অনেকে মাংস চেয়েও পাননি। সহসা মাংসের দাম কমবে বলে মনে হয় না।’
সেন্ট্রাল রোডের মাংস বিক্রেতা আফজাল হোসেন বলেন, ‘কেউ ৩-৪ কেজি নিলে ৬৬০ টাকা করে রাখছি। কিন্তু এক কেজি নিলে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছি। গরুর দাম বেড়েছে, তাই মাংসের দামও বেড়েছে। সমস্যা হচ্ছে, আগে প্রতিদিন বিক্রি করতাম ৩ থেকে ৪ মণ। এখন মাংসের দাম বাড়ায় বিক্রি কম হচ্ছে, সারাদিনে ২ মণ বিক্রি করাও কষ্টকর হচ্ছে।’
সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি’র তথ্য মতে, রাজধানীতে বর্তমানে গরুর মাংস কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮০-৭০০ টাকায়। মাসখানেক আগেও দাম ছিল ৬০০ টাকা কেজি। এক বছর আগের এই সময়ের চিত্র ছিল আরও ভিন্ন। ওই সময় গরুর মাংসের কেজি ছিল ৫০০-৫৫০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫০-২০০ টাকা।
এদিকে, রোজার সময় মাংসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা হিসেবে রাজধানীর ১০টি স্থানে ৫৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। গত ৪ এপ্রিল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যদিও এসব কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এইসব ট্রাক থেকে গরুর মাংস ও মুরগীর মাংস অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ক্রেতা। এ নিয়ে প্রায়ই ক্রেতাদের সঙ্গে প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মানুষদের বাক-বিতণ্ডা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাংসের এই চড়া দামের ব্যাপারে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘রোজার মাসে মাংসের কেজি ৭০০ টাকা হওয়া একদমই উচিত নয়। এমনিতে সব জিনিসের দাম বাড়তি। তবে এটা সত্যি, মাংস ব্যবসা এখন আর খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে নেই। এক শ্রেণির সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে মাংসের বাজারের নিয়ন্ত্রণ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কঠোরভাবে বাজার তদারকি না করলে অচিরেই মাংসের কেজি এক হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকবে। যে হারে গরুর দাম বাড়ছে, তারচেয়ে অনেক বেশি হারে কেন মাংসের দাম বাড়ছে। এটার প্রতি নজর দেওয়ার পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিৎ।’ সূএ: রাইজিংবিডি ডটকম