খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১০ টাকার বেশি

খোলাবাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমেছে। খোলাবাজারে এখন প্রতি ডলার ১১০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দামেও আশানুরূপ ডলার মিলছে না। এর আগে কখনও একদিনে ডলারের দর এতো বেড়ে এ পর্যায়ে ওঠেনি।

 

আজ  খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে। যা সোমবার ছিল ১০৭ টাকা। সোমবার (২৫ জুলাই) ব্যাংকগুলোর কাছে ৯৪.৭০ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

রাজধানীর দিলকুশা, মতিঝিল, পল্টন এলাকায় মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডলারের সরবরাহ কম থাকায় তারা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করতে পারছে না। আর সংকটের কারণে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে তুলনামূলক কম দামে নিতে ক্রেতাদের পরামর্শ দিচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার  ব্যাংকগুলোতে ডলার ১০২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

রাজধানীর মতিঝিলের অর্নেট মানি এক্সচেঞ্জের মাসুম আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা গতকাল ১০৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বশেষ প্রতি ডলার ১০৭ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ সকালে কিছুটা কম থাকলেও দুপুরে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১১.৫০ টাকায়। ডলার সরবরাহ কম থাকায় দর বাড়ছে বলে জানান তিনি।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে কোনো ক্রেতা আসলে তাদেরকে খোলাবাজার থেকে না কিনে ব্যাংক থেকে ডলার নেওয়ার পরামর্শ দেই। কারণ ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার আমরা দিতে পারছি না।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুডউইল মানি এক্সচেঞ্জের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গতকাল প্রতি ডলার ১০৭ টাকা থেকে ১০৭.৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজকে শুরু হয়েছে ১১০ টাকা দিয়ে। বেলা যত গড়াচ্ছে তত দাম বাড়ছে। দুপুরে ১১১ টাকা ক্রস করছে ডলারের দাম। এমন উল্টোপাল্টা ডলারের বাজার কখনও দেখিনি।

 

পুরানা পল্টনের চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জের আমিনুল এহসান রাইজিংবিডিকে বলেন, আজকে ডলারের উল্টোপাল্টা রেট চলছে। আমাদের অনেক ব্যবসায়ীর কাছে চাহিদা অনুযায়ী ডলার নেই। আজ সকাল থেকে ডলার ১১০ টাকা করে বিক্রি করলেও দুপুরে তা ১১১ টাকা ক্রস করেছে। ক্রেতা কিছু থাকলেও বাজারে ডলার বিক্রেতা নেই। আশা করেছিলাম হজ যাত্রীরা দেশে ফিরলে কিছু ডলার সরবরাহ হবে। কিন্তু অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার দেশে ফেরা হাজিদের কাছ থেকে ডলার আমাদের বাজারে আসেনি।

 

ডলারের দাম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দু’এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছাড়ায়।

 

এদিকে, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা হয়েছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। যা ৯ জানুয়ারি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ টাকা। গত ২৩ মার্চ তা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। এরপর কয়েক দফা ডলারের দাম বাড়ে। পরে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু তাতেও বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় ডলারের এক রেট উঠিয়ে দিয়ে গত ২ জুন আরও ৯০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।  এরপর আবারও কয়েক দফা দাম বাড়ে। গত ২১ জুলাই ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪.৪৫ টাকা। সোমবার আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হয়েছে ৯৪.৭০ টাকায়। যা ডলারের দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

 

ঢাকা/নাজমুল/ইভা

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন : রিজওয়ানা

» বিএনপিকে ওয়ান ইলেভেনের মতো মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হচ্ছে : তারেক রহমান

» জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি আবেদন শুরু মঙ্গলবার

» রমজানে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন রেমিটেন্স গ্রাহকরা পাচ্ছেন ব্র্যাক ব্যাংকের বিশেষ উপহার

» বাংলালিংকের নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন ইওহান বুসে

» বাগেরহাটে ‘মানবতার পথিক’ সংগঠনের উদ্যোগে ইফতার ঈদ উপহার বিতরণ

» সৎ ও সাহসী সাংবাদিকরা সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেন ….. কাজী খায়রুজ্জামান শিপন

» কিশোরগঞ্জে যুবলীগ নেতা ভিপি হেলাল গ্রেপ্তার

» ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত

» কোস্ট গার্ডের সঙ্গে গোলাগুলি: দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাত আটক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১০ টাকার বেশি

খোলাবাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমেছে। খোলাবাজারে এখন প্রতি ডলার ১১০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দামেও আশানুরূপ ডলার মিলছে না। এর আগে কখনও একদিনে ডলারের দর এতো বেড়ে এ পর্যায়ে ওঠেনি।

 

আজ  খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে। যা সোমবার ছিল ১০৭ টাকা। সোমবার (২৫ জুলাই) ব্যাংকগুলোর কাছে ৯৪.৭০ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

রাজধানীর দিলকুশা, মতিঝিল, পল্টন এলাকায় মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডলারের সরবরাহ কম থাকায় তারা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করতে পারছে না। আর সংকটের কারণে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে তুলনামূলক কম দামে নিতে ক্রেতাদের পরামর্শ দিচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার  ব্যাংকগুলোতে ডলার ১০২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

রাজধানীর মতিঝিলের অর্নেট মানি এক্সচেঞ্জের মাসুম আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা গতকাল ১০৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বশেষ প্রতি ডলার ১০৭ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ সকালে কিছুটা কম থাকলেও দুপুরে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১১.৫০ টাকায়। ডলার সরবরাহ কম থাকায় দর বাড়ছে বলে জানান তিনি।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে কোনো ক্রেতা আসলে তাদেরকে খোলাবাজার থেকে না কিনে ব্যাংক থেকে ডলার নেওয়ার পরামর্শ দেই। কারণ ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার আমরা দিতে পারছি না।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুডউইল মানি এক্সচেঞ্জের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গতকাল প্রতি ডলার ১০৭ টাকা থেকে ১০৭.৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজকে শুরু হয়েছে ১১০ টাকা দিয়ে। বেলা যত গড়াচ্ছে তত দাম বাড়ছে। দুপুরে ১১১ টাকা ক্রস করছে ডলারের দাম। এমন উল্টোপাল্টা ডলারের বাজার কখনও দেখিনি।

 

পুরানা পল্টনের চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জের আমিনুল এহসান রাইজিংবিডিকে বলেন, আজকে ডলারের উল্টোপাল্টা রেট চলছে। আমাদের অনেক ব্যবসায়ীর কাছে চাহিদা অনুযায়ী ডলার নেই। আজ সকাল থেকে ডলার ১১০ টাকা করে বিক্রি করলেও দুপুরে তা ১১১ টাকা ক্রস করেছে। ক্রেতা কিছু থাকলেও বাজারে ডলার বিক্রেতা নেই। আশা করেছিলাম হজ যাত্রীরা দেশে ফিরলে কিছু ডলার সরবরাহ হবে। কিন্তু অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার দেশে ফেরা হাজিদের কাছ থেকে ডলার আমাদের বাজারে আসেনি।

 

ডলারের দাম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দু’এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছাড়ায়।

 

এদিকে, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা হয়েছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। যা ৯ জানুয়ারি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ টাকা। গত ২৩ মার্চ তা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। এরপর কয়েক দফা ডলারের দাম বাড়ে। পরে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু তাতেও বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় ডলারের এক রেট উঠিয়ে দিয়ে গত ২ জুন আরও ৯০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।  এরপর আবারও কয়েক দফা দাম বাড়ে। গত ২১ জুলাই ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪.৪৫ টাকা। সোমবার আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হয়েছে ৯৪.৭০ টাকায়। যা ডলারের দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

 

ঢাকা/নাজমুল/ইভা

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com