কাতারে হাজার কোটি টাকার স্টেডিয়াম-হোটেলের ভবিষ্যৎ কী?

কাতার বিশ্বকাপের মহা আয়োজন শেষ হয়েছে। দেশে ফিরে গেছেন ফুটবল খেলা দেখতে আসা লাখ লাখ দর্শক। যেটুকু উৎসব এখনও আছে তাও শেষ হবে কয়েকদিনের মধ্যে। তারপর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা দেশটির বিলাসবহুল হোটেল ও স্টেডিয়ামের কী হবে?

 

ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতার খরচ করেছে ২২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশি টাকায় যা ২০ লাখ কোটি কার বেশি। রেকর্ড পরিমাণ খরচ করে কাতার অবশ্য আয় করেছে অনেক কম। হিসাব বলছে, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭টি ফুটবল বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে যা খরচ হয়েছে তার চার গুণেরও বেশি টাকা খরচ কাতার।

এত খরচের কারণ, স্টেডিয়াম ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন। বিশ্বকাপের জন্য কাতারে ৭টি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। ফুটবলারদের অনুশীলনের জন্যও আলাদা মাঠের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লুসাইল স্টেডিয়ামও। যেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফাইনাল ম্যাচ।

 

বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়েছে এই স্টেডিয়ামগুলোর। কাতার বিশ্বকাপের জন্য যে ৭টি স্টেডিয়াম তৈরি করেছে, তার মধ্যে ১টি স্টেডিয়াম কাতার থেকে চিরতরে বিদায় নেবে। সেটি হলো স্টেডিয়াম ৯৭৪। কাতারের রাস আবু আবৌদ এলাকায় তৈরি এই বন্দর কাঠামোর স্টেডিয়ামে ৪৪ হাজারের বেশি আসন রয়েছে। জাহাজের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যবাহী স্টিলের কন্টেনার থেকে তৈরি হয়েছে। অস্থায়ী ভাবে তৈরি এই স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ৯৭৪টি শিপিং কন্টেনার। কাতারের আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোডও +৯৭৪। তাই স্টেডিয়ামটির নাম দেওয়া হয় ৯৭৪।

 

বিশ্বকাপের মাঝেই স্টেডিয়াম ৯৭৪ স্টেডিয়াম ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই খুলে ফেলা হয়েছে মডিউলার স্টেডিয়ামের একাংশ। ২০২১ সালে ৩০ নভেম্বর স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করা হয়। বিশ্বকাপ চলাকালীন মোট ৭টি ম্যাচ এই মাঠে হয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর ব্যবহারের জন্য বন্ধও করে দেওয়া হয় স্টেডিয়ামটি।

 

যেসব দেশে পরিকাঠামো খারাপ সেই সব দেশে এই স্টেডিয়ামের ভাঙা অংশগুলো পাঠানো হতে পারে। মনে করা হচ্ছে আফ্রিকার কোনও দেশে এই স্টেডিয়ামের অংশগুলো পাবে। সেখানে খেলাধুলোর জন্য নতুনভাবে গড়া হবে এই স্টেডিয়াম।

stadiums qatar-world-cup

বাকি স্টেডিয়ামগুলোর কী হবে? কাতারের প্রশাসন বলছে, লুসাইল স্টেডিয়ামে একটি স্কুল এবং অনেকগুলো দোকান-ক্যাফে তৈরি করা হবে। খেলাধুলার করারও প্রচুর জায়গা থাকবে। পাশাপাশি একটি হাসপাতাল এবং একটি কমিউনিটি হল-ও স্টেডিয়ামের জায়গায় তৈরি করা হবে। ফুটবল বিশ্বকাপের স্মৃতিতে একটি মিউজিয়াম তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে।

 

আল বায়ত স্টেডিয়ামে খোলা হবে একটি বিলাসবহুল হোটেল, একটি শপিং মল এবং একটি ওষুধের দোকান। মূলত খেলাধুলোর সময় যে ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীগুলোর প্রয়োজন, সেগুলোই ওই ওষুধের দোকানে পাওয়া যাবে।

 

২টি স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে স্থানীয় ২টি ফুটবল ক্লাব। আল রাইয়ান খেলবে আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে এবং আল ওয়াকরাহ খেলবে আল জানুবে। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে এখন থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু করবে কাতারের জাতীয় ফুটবল দল। আর সেই প্রশিক্ষণের জন্য কাজে লাগানো হবে খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামকে।

 

বাকি স্টেডিয়ামগুলোকে আবার নতুন করে তৈরি করা হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এশিয়ান কাপের জন্য এই স্টেডিয়ামগুলো ব্যবহার করা হতে পারে।

 

বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা হোটেলগুলোকে বদলে ফেলা হতে পারে ছোট ছোট আবাসনে। কয়েকটি হোটেল আরও উঁচু করে বহুতলে পরিণত করা হতে পারে।

২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, ছোট্ট এই দেশের মোট জনসংখ্যা ২৯.৩ লক্ষ। যার মধ্যে কাতারের স্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা তিন লাখ মতো। বাকি বড় অংশ অন্যান্য দেশ থেকে কাজের জন্য সেখানে রয়েছে।

 

তাই কাতারের এসব বিলাসবহুল আবাসনে থাকার মতো লোক খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই হিসেবে, এসব অবকাঠামো কিছুদিন পর পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না : মির্জা ফখরুল

» হজ ফ্লাইট-২০২৫ উদ্বোধন করলেন ধর্ম উপদেষ্টা

» স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

» বাগেরহাটে মুখমন্ডলে টেপ প্যাঁচানো অবস্থায় যুবকের মরদেহ উদ্ধার

» গ্যালাক্সি এ০৬ স্মার্টফোন উন্মোচন করল স্যামসাং

» স্যার আঙ্গরে স্কুল ফিরিয়ে দিন আমরা পড়বের চাই

» ইসলামপুর দুস্থ্য ও অতিদরিদ্রদের মাঝে নলকুপ বিতরন

» বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম হজ ফ্লাইটের যাত্রীদের উপহার দেবে প্রাইম ব্যাংক

» বাংলাদেশি টাকায় ঝামেলামুক্ত হজ রোমিং প্যাক নিয়ে এলো বাংলালিংক

» লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কাতারে হাজার কোটি টাকার স্টেডিয়াম-হোটেলের ভবিষ্যৎ কী?

কাতার বিশ্বকাপের মহা আয়োজন শেষ হয়েছে। দেশে ফিরে গেছেন ফুটবল খেলা দেখতে আসা লাখ লাখ দর্শক। যেটুকু উৎসব এখনও আছে তাও শেষ হবে কয়েকদিনের মধ্যে। তারপর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা দেশটির বিলাসবহুল হোটেল ও স্টেডিয়ামের কী হবে?

 

ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতার খরচ করেছে ২২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশি টাকায় যা ২০ লাখ কোটি কার বেশি। রেকর্ড পরিমাণ খরচ করে কাতার অবশ্য আয় করেছে অনেক কম। হিসাব বলছে, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭টি ফুটবল বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে যা খরচ হয়েছে তার চার গুণেরও বেশি টাকা খরচ কাতার।

এত খরচের কারণ, স্টেডিয়াম ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন। বিশ্বকাপের জন্য কাতারে ৭টি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। ফুটবলারদের অনুশীলনের জন্যও আলাদা মাঠের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লুসাইল স্টেডিয়ামও। যেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফাইনাল ম্যাচ।

 

বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়েছে এই স্টেডিয়ামগুলোর। কাতার বিশ্বকাপের জন্য যে ৭টি স্টেডিয়াম তৈরি করেছে, তার মধ্যে ১টি স্টেডিয়াম কাতার থেকে চিরতরে বিদায় নেবে। সেটি হলো স্টেডিয়াম ৯৭৪। কাতারের রাস আবু আবৌদ এলাকায় তৈরি এই বন্দর কাঠামোর স্টেডিয়ামে ৪৪ হাজারের বেশি আসন রয়েছে। জাহাজের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যবাহী স্টিলের কন্টেনার থেকে তৈরি হয়েছে। অস্থায়ী ভাবে তৈরি এই স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ৯৭৪টি শিপিং কন্টেনার। কাতারের আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোডও +৯৭৪। তাই স্টেডিয়ামটির নাম দেওয়া হয় ৯৭৪।

 

বিশ্বকাপের মাঝেই স্টেডিয়াম ৯৭৪ স্টেডিয়াম ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই খুলে ফেলা হয়েছে মডিউলার স্টেডিয়ামের একাংশ। ২০২১ সালে ৩০ নভেম্বর স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করা হয়। বিশ্বকাপ চলাকালীন মোট ৭টি ম্যাচ এই মাঠে হয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর ব্যবহারের জন্য বন্ধও করে দেওয়া হয় স্টেডিয়ামটি।

 

যেসব দেশে পরিকাঠামো খারাপ সেই সব দেশে এই স্টেডিয়ামের ভাঙা অংশগুলো পাঠানো হতে পারে। মনে করা হচ্ছে আফ্রিকার কোনও দেশে এই স্টেডিয়ামের অংশগুলো পাবে। সেখানে খেলাধুলোর জন্য নতুনভাবে গড়া হবে এই স্টেডিয়াম।

stadiums qatar-world-cup

বাকি স্টেডিয়ামগুলোর কী হবে? কাতারের প্রশাসন বলছে, লুসাইল স্টেডিয়ামে একটি স্কুল এবং অনেকগুলো দোকান-ক্যাফে তৈরি করা হবে। খেলাধুলার করারও প্রচুর জায়গা থাকবে। পাশাপাশি একটি হাসপাতাল এবং একটি কমিউনিটি হল-ও স্টেডিয়ামের জায়গায় তৈরি করা হবে। ফুটবল বিশ্বকাপের স্মৃতিতে একটি মিউজিয়াম তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে।

 

আল বায়ত স্টেডিয়ামে খোলা হবে একটি বিলাসবহুল হোটেল, একটি শপিং মল এবং একটি ওষুধের দোকান। মূলত খেলাধুলোর সময় যে ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীগুলোর প্রয়োজন, সেগুলোই ওই ওষুধের দোকানে পাওয়া যাবে।

 

২টি স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে স্থানীয় ২টি ফুটবল ক্লাব। আল রাইয়ান খেলবে আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে এবং আল ওয়াকরাহ খেলবে আল জানুবে। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে এখন থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু করবে কাতারের জাতীয় ফুটবল দল। আর সেই প্রশিক্ষণের জন্য কাজে লাগানো হবে খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামকে।

 

বাকি স্টেডিয়ামগুলোকে আবার নতুন করে তৈরি করা হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এশিয়ান কাপের জন্য এই স্টেডিয়ামগুলো ব্যবহার করা হতে পারে।

 

বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা হোটেলগুলোকে বদলে ফেলা হতে পারে ছোট ছোট আবাসনে। কয়েকটি হোটেল আরও উঁচু করে বহুতলে পরিণত করা হতে পারে।

২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, ছোট্ট এই দেশের মোট জনসংখ্যা ২৯.৩ লক্ষ। যার মধ্যে কাতারের স্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা তিন লাখ মতো। বাকি বড় অংশ অন্যান্য দেশ থেকে কাজের জন্য সেখানে রয়েছে।

 

তাই কাতারের এসব বিলাসবহুল আবাসনে থাকার মতো লোক খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই হিসেবে, এসব অবকাঠামো কিছুদিন পর পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com