স্বাভাবিক মানুষের মতোই চলাফেরা করতে পারবেন প্যারালাইজড বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিরাও। এমনই এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন ফ্রান্সের একদল বিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-এফডিএ প্রযুক্তিটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষদের স্বপ্ন পূরণের জাদুরকাঠি এ প্রযুক্তিটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ওয়ান্ডারক্রাফট’। এটি উদ্ভাবন করেছেন ফ্রান্সের তিন রোবটিক্স প্রকৌশলী। নিজ পরিবারের সদস্যদের করুণ পরিণতি দেখে এমন আবিষ্কারের উদ্যোগ নেন তারা। দীর্ঘ গবেষণার পর ২০২০ সালে আসে সাফল্য। তাদের প্রত্যাশা, অদূর ভবিষ্যতে পঙ্গুত্বের করুণ পরিণতি থেকে মানুষকে রক্ষা করবে এ প্রযুক্তি।
ওয়ান্ডারক্রাফটসের নির্মাতা জেন লুইস কন্সতানজা বলেন, তিনজন ২০১২ সাল থেকে এ প্রযুক্তিটির পেছনে লেগে আছি। আমাদের দুজনের পরিবারেই হাঁটতে অক্ষম এমন সদস্য আছে। আমার ছোট্ট ছেলেটির হাঁটাতে চাওয়ার আকুতি দেখেই আবিষ্কারের কথা মাথায় আসে। আজ থেকে ১০ বছর পর কোনো মানুষের যেন হুইলচেয়ার প্রয়োজন না হয় সে লক্ষ্যেই কাজ করছি আমরা।
ওয়ান্ডারক্রাফটসের আরেক নির্মাতা কেভিন পিটি বলেন, স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলার থেকে এটা খানিকটা ভিন্ন। কারণ নিজেকেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে নির্দেশনা আসে ব্রেন থেকে। আর আমাদের ক্ষেত্রে সেটা রিমোট চালিত। তারপরও দিন শেষে একটা শান্তি কাজ করে।
উদ্ভাবকের ছেলে অস্কার কন্সতানজা বলেন, আগে কারো সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারতাম না। এখন একাই হাঁটতে পারছি। নিজেকে স্বাধীন মনে হচ্ছে।
মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিডিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ৮ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। যা দীর্ঘমেয়াদী প্যারালাইসিসের অন্যতম কারণ। এমন রোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে সম্প্রতি যন্ত্রটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ।
মূলত এক্সোসকেলিটন বা বাহ্যিক কঙ্কাল হিসেবে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে হাঁটতে সহায়তা করে এ প্রযুক্তি। এটি চলে ব্যবহারকারীর নির্দেশনা অনুযায়ী। এ যন্ত্রটি বিকলাঙ্গ মানুষদের জীবনীশক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে বলে প্রত্যাশা উদ্ভাবকদের। তবে, বিপুল অংকের অর্থ খরচ করতে হবে অত্যাধুনিক এ যন্ত্রের সহায়তা নিতে। একেকটি ওয়ান্ডারক্রাফটের দাম ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।