ই-ভিসায় মালয়েশিয়ায় মানব পাচার

নতুন পদ্ধতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার চক্র। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ইলেকট্রনিক ভিসা বা ই-ভিসা ইস্যু করে এই পাচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। হঠাৎ করেই জমজমাট হয়ে উঠেছে এই ব্যবসা। এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫ শতাধিক বাংলাদেশি এই পন্থায় পাড়ি দিয়েছেন মালয়েশিয়ায়। এই পদ্ধতিতে দেশ ছাড়ার অপেক্ষায় থাকা বেশ কয়েকজনের ই-ভিসার কপিও এসেছে  হাতে।

 

জানা যায়, করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর সাধারণ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ রেখেছিল মালয়েশিয়া। চলতি মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিদেশিদের জন্য খুলে দেয়। এরপর থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি চক্রটি। কাজের জন্য মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকদের পাঠানো শুরু হয় ট্যুরিস্ট ভিসায়। প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রমাণাদি ছাড়া ঢাকায় মালয়েশিয়া হাইকমিশন থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা ইস্যু করে না। কিন্তু দালাল চক্র সৌদি আরব, দুবাই মালয়েশীয় দূতাবাস থেকে ই-ভিসা ইস্যু করছে দেদার। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে নিয়ে ভিসা বিক্রি করছে দালাল চক্র। পরে ফ্লাইটে আগে কথিত ‘এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট’ এর মাধ্যমে বাকি সবকিছু ম্যানেজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যয় করতে হয়েছে অর্র্ধলক্ষাধিক অর্থ। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে ধরা না পড়ে কাজ করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। কারণ জোরপূর্বক শ্রম ও মানব পাচার রোধে মেগা অপারেশন অব্যাহত রেখেছে মালয়েশিয়া। দেশটিতে যে কোনো দেশি বা বিদেশি কর্মীকে নিয়োগকর্তা বা কোনো ব্যক্তি জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করলে অথবা এ উদ্দেশ্যে পাচারের শিকার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে ‘অপস ব্যানতেরাস’ নামের এই মেগা অপারেশন টিম। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৪৪৬ আইনের অধীন মোট ১ হাজার ২৮৫টি তদন্তমূলক ডকুমেন্ট খোলা হয়েছে, যার মধ্যে ১৩৫ জন নিয়োগকর্তার ১০ লাখ ৭ হাজার রিঙ্গিতের জরিমানাসহ মামলা করা হয়েছে। ‘অপস ব্যানতেরাস’ মেগা অপারেশনে দেশটির ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট, রয়্যাল মালয়েশিয়া পুলিশ এবং ডিপার্টমেন্ট অব অকুপেশনাল সেইফটি অ্যান্ড হেলথসহ (ডিওএসএইচ) বিভিন্ন বিভাগ এবং অন্যান্য প্রয়োগকারী সংস্থা। দেশটিতে মানব পাচার এবং অভিবাসীদের চোরাচালানের জন্য ১৫ থেকে ২০ বছর কারাদণ্ডের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও গুরুতর অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো শাস্তি এবং বেত্রাঘাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জয়নুদ্দিন সম্প্রতি পার্লামেন্টে বিলটি পেশ করার সময় বলেন, সরকারি কর্মচারী জড়িত থাকলে এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে শাস্তি পাবে। পাচারের শিকার ব্যক্তি গুরুতর আঘাত পেলে বা মৃত্যু ঘটলে বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়া বা আত্মহত্যা করলে পাচারকারীর গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়াও শিশু ও পঙ্গু ব্যক্তিকে পাচার করলে গুরুতর অপরাধ হবে। সরকার গুরুত্ব দিয়ে শুধু কারাদণ্ড বৃদ্ধি নয় বেত্রাঘাত শাস্তির বিধান রেখেছে। ২০১৫ সাল থেকে মানব পাচারের ১ হাজার ৯১৫টি ও অভিবাসীদের ১ হাজার ৫২টি পাচারের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই সময়ে ১১ হাজার ৯৪২ ভুক্তভোগীকে রক্ষা করা ও সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঐকমত্য জরুরি : মান্না

» আরএসএফের হামলায় পালিয়েছে সুদানের এক গ্রামের ৮ হাজার পরিবার

» সাবেক এমপি মজিদ খান গ্রেফতার

» ‘দেশে যেন সহিংসতা ও হানাহানি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে’

» ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ সারাদেশে আরও ৩৪৩ জন গ্রেফতার

» রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক ১৫ ফেব্রুয়ারি

» অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করুন : মাহফুজ আলম

» ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার : মির্জা ফখরুল

» ইসলামপুরে ছাত্রদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল

» বিঞ্জে আসছে ভিকি জাহেদের ‘নীল সুখ’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ই-ভিসায় মালয়েশিয়ায় মানব পাচার

নতুন পদ্ধতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার চক্র। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ইলেকট্রনিক ভিসা বা ই-ভিসা ইস্যু করে এই পাচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। হঠাৎ করেই জমজমাট হয়ে উঠেছে এই ব্যবসা। এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫ শতাধিক বাংলাদেশি এই পন্থায় পাড়ি দিয়েছেন মালয়েশিয়ায়। এই পদ্ধতিতে দেশ ছাড়ার অপেক্ষায় থাকা বেশ কয়েকজনের ই-ভিসার কপিও এসেছে  হাতে।

 

জানা যায়, করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর সাধারণ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ রেখেছিল মালয়েশিয়া। চলতি মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিদেশিদের জন্য খুলে দেয়। এরপর থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি চক্রটি। কাজের জন্য মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকদের পাঠানো শুরু হয় ট্যুরিস্ট ভিসায়। প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রমাণাদি ছাড়া ঢাকায় মালয়েশিয়া হাইকমিশন থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা ইস্যু করে না। কিন্তু দালাল চক্র সৌদি আরব, দুবাই মালয়েশীয় দূতাবাস থেকে ই-ভিসা ইস্যু করছে দেদার। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে নিয়ে ভিসা বিক্রি করছে দালাল চক্র। পরে ফ্লাইটে আগে কথিত ‘এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট’ এর মাধ্যমে বাকি সবকিছু ম্যানেজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যয় করতে হয়েছে অর্র্ধলক্ষাধিক অর্থ। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে ধরা না পড়ে কাজ করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। কারণ জোরপূর্বক শ্রম ও মানব পাচার রোধে মেগা অপারেশন অব্যাহত রেখেছে মালয়েশিয়া। দেশটিতে যে কোনো দেশি বা বিদেশি কর্মীকে নিয়োগকর্তা বা কোনো ব্যক্তি জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করলে অথবা এ উদ্দেশ্যে পাচারের শিকার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে ‘অপস ব্যানতেরাস’ নামের এই মেগা অপারেশন টিম। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৪৪৬ আইনের অধীন মোট ১ হাজার ২৮৫টি তদন্তমূলক ডকুমেন্ট খোলা হয়েছে, যার মধ্যে ১৩৫ জন নিয়োগকর্তার ১০ লাখ ৭ হাজার রিঙ্গিতের জরিমানাসহ মামলা করা হয়েছে। ‘অপস ব্যানতেরাস’ মেগা অপারেশনে দেশটির ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট, রয়্যাল মালয়েশিয়া পুলিশ এবং ডিপার্টমেন্ট অব অকুপেশনাল সেইফটি অ্যান্ড হেলথসহ (ডিওএসএইচ) বিভিন্ন বিভাগ এবং অন্যান্য প্রয়োগকারী সংস্থা। দেশটিতে মানব পাচার এবং অভিবাসীদের চোরাচালানের জন্য ১৫ থেকে ২০ বছর কারাদণ্ডের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও গুরুতর অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো শাস্তি এবং বেত্রাঘাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জয়নুদ্দিন সম্প্রতি পার্লামেন্টে বিলটি পেশ করার সময় বলেন, সরকারি কর্মচারী জড়িত থাকলে এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে শাস্তি পাবে। পাচারের শিকার ব্যক্তি গুরুতর আঘাত পেলে বা মৃত্যু ঘটলে বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়া বা আত্মহত্যা করলে পাচারকারীর গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়াও শিশু ও পঙ্গু ব্যক্তিকে পাচার করলে গুরুতর অপরাধ হবে। সরকার গুরুত্ব দিয়ে শুধু কারাদণ্ড বৃদ্ধি নয় বেত্রাঘাত শাস্তির বিধান রেখেছে। ২০১৫ সাল থেকে মানব পাচারের ১ হাজার ৯১৫টি ও অভিবাসীদের ১ হাজার ৫২টি পাচারের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই সময়ে ১১ হাজার ৯৪২ ভুক্তভোগীকে রক্ষা করা ও সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com