অস্টিওম্যালেসিয়ার লক্ষণ

সংগৃহীত ছবি
ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন:  অস্টিওম্যালেসিয়া রোগটি মূলত শরীরের হাড় নরম হওয়াকে বোঝায়। এর মূল কারণ- ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি। অর্থাৎ এ রোগটি ভিটামিন-ডি’র অভাবজনিত রোগ। ভিটামিন-ডি’র অভাবে শিশুদের যে রোগ হয় তাকে বলে রিকেট। আর এই রোগটি যখন বড়দের দেখা যায়, তখন একে বলে অস্টিওম্যালেসিয়া। ভিটামিন-ডি’র অভাবে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ঠিকমতো শরীরের হাড় গঠন করতে পারে না। আর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ে কম থাকলে তা নরম হাড়ে পরিণত হয়। কারণ ভিটামিন-ডি’র অভাবে অস্টিওম্যালেসিয়া বা রিকেট হয়। ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতায় এ রোগটি হয়। প্রধান কারণগুলো হলো খাবারে ভিটামিন-ডি না থাকা, শরীরের চামড়ায় নিয়মিত ভিটামিন-ডি তৈরি না হওয়া। অর্থাৎ রোদ না লাগা, কোনো কারণে ভিটামিন-ডি শরীরে প্রবেশ না করা, যেমন পাকস্থলির অপারেশন, অন্ত্রের অপারেশন, যকৃতের অসুখ, সিলিয়াক ডিজিজ ইত্যাদি। শরীরের বিপাকক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হলেও এমন হতে পারে। যেমন রেনাল ফেলিউর, রেনাল অস্টিওডিস্টোপি ও কিছু ওষুধ যেমন এন্টিকনভালসেন্ট, সিডেটিব বা ঘুমের ওষুধ এবং রিফামপিসিন সেবন করলে। এ ছাড়া রক্তে ফসফেটের পরিমাণ কমে গেলেও এই রোগ হয়।

 

লক্ষণ : শরীরের হাড়ের মধ্যে অস্বস্তি ভাব, পিঠে ব্যথা ও কোমরে ব্যথা। মাংসপেশির দুর্বলতা দেখা দেয়। রোগী সাধারণত ওপরের দিকে উঠতে অর্থাৎ সিঁডি বেয়ে ওপরে উঠতে এবং চেয়ার থেকে উঠতে কষ্ট এবং দুর্বলতা অনুভব করে। হাঁটতে গিয়ে সমস্যা হয়। রোগীর বিভিন্ন সময়ে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। মুখের মাংসপেশি নড়তে পারে। কোনো আঘাত ছাড়াই শরীরে হাড় ভেঙে যায়। হাড়ের এক্স-রে করলে ক্ষয় হওয়া এবং ভাঙা মনে হয়। সাধারণত বুকের পাঁজরের হাড়, পায়ের ওপরের অংশের হাড় এবং শ্রেণিচক্রের হাড় বেশি আক্রান্ত হয়।

পরামর্শ : অস্টিওম্যালেসিয়া সাধারণত ভিটামিন-ডি কম গ্রহণ করার জন্য হয়। তাই খাবারে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করার জন্য বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত যে সব খাবার ভিটামিন-ডি’ সমৃদ্ধ। যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম ও যকৃত। সূর্যের আলো শরীরের চামড়ায় পড়লে সেখানে ভিটামিন-ডি উৎপন্ন হয়। সুতরাং রোগীকে দুপুর ১২টার আগ পর্যন্ত কিংবা বিকাল ৩টার পর রোদে রাখা। প্রতিদিন ২৫-১২৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-ডি ওষুধ হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। শরীরের চামড়ার সূর্যরশ্মি পড়লে সেখানে ভিটামিন-ডি উৎপন্ন হয়। তাই অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ থেকে অথবা শিশুদের রিকেট থেকে বেঁচে থাকার সহজ উপায় হলো শরীরে রোদ লাগানো।

 

লেখক : আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল লি. শ্যামলী, মিরপুর রোড, ঢাকা।  সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন : প্রেস সচিব

» জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ডাকে বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো

» ৫১ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারি আটক

» খুনি হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: রফিকুল ইসলাম খান

» যুক্তরাষ্ট্রে আদানি নিয়ে প্রশ্ন করতেই যেভাবে এড়িয়ে গেলেন মোদি

» হজের জন্য বিমান ভাড়া বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই: ধর্ম উপদেষ্টা

» জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছবি-ভিডিও আহ্বান, নিরাপত্তা ইস্যুতে যা বলল পুলিশ

» পদত্যাগ করছেন উপদেষ্টা নাহিদ, আসছে নতুন দল

» ​​​​​​​আমরা বাংলাদেশে অযোগ্য শাসক চাই না: হাসনাত আব্দুল্লাহ

» পৃথিবীর শেষ রাস্তা কোথায় জানেন?

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অস্টিওম্যালেসিয়ার লক্ষণ

সংগৃহীত ছবি
ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন:  অস্টিওম্যালেসিয়া রোগটি মূলত শরীরের হাড় নরম হওয়াকে বোঝায়। এর মূল কারণ- ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি। অর্থাৎ এ রোগটি ভিটামিন-ডি’র অভাবজনিত রোগ। ভিটামিন-ডি’র অভাবে শিশুদের যে রোগ হয় তাকে বলে রিকেট। আর এই রোগটি যখন বড়দের দেখা যায়, তখন একে বলে অস্টিওম্যালেসিয়া। ভিটামিন-ডি’র অভাবে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ঠিকমতো শরীরের হাড় গঠন করতে পারে না। আর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ে কম থাকলে তা নরম হাড়ে পরিণত হয়। কারণ ভিটামিন-ডি’র অভাবে অস্টিওম্যালেসিয়া বা রিকেট হয়। ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতায় এ রোগটি হয়। প্রধান কারণগুলো হলো খাবারে ভিটামিন-ডি না থাকা, শরীরের চামড়ায় নিয়মিত ভিটামিন-ডি তৈরি না হওয়া। অর্থাৎ রোদ না লাগা, কোনো কারণে ভিটামিন-ডি শরীরে প্রবেশ না করা, যেমন পাকস্থলির অপারেশন, অন্ত্রের অপারেশন, যকৃতের অসুখ, সিলিয়াক ডিজিজ ইত্যাদি। শরীরের বিপাকক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হলেও এমন হতে পারে। যেমন রেনাল ফেলিউর, রেনাল অস্টিওডিস্টোপি ও কিছু ওষুধ যেমন এন্টিকনভালসেন্ট, সিডেটিব বা ঘুমের ওষুধ এবং রিফামপিসিন সেবন করলে। এ ছাড়া রক্তে ফসফেটের পরিমাণ কমে গেলেও এই রোগ হয়।

 

লক্ষণ : শরীরের হাড়ের মধ্যে অস্বস্তি ভাব, পিঠে ব্যথা ও কোমরে ব্যথা। মাংসপেশির দুর্বলতা দেখা দেয়। রোগী সাধারণত ওপরের দিকে উঠতে অর্থাৎ সিঁডি বেয়ে ওপরে উঠতে এবং চেয়ার থেকে উঠতে কষ্ট এবং দুর্বলতা অনুভব করে। হাঁটতে গিয়ে সমস্যা হয়। রোগীর বিভিন্ন সময়ে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। মুখের মাংসপেশি নড়তে পারে। কোনো আঘাত ছাড়াই শরীরে হাড় ভেঙে যায়। হাড়ের এক্স-রে করলে ক্ষয় হওয়া এবং ভাঙা মনে হয়। সাধারণত বুকের পাঁজরের হাড়, পায়ের ওপরের অংশের হাড় এবং শ্রেণিচক্রের হাড় বেশি আক্রান্ত হয়।

পরামর্শ : অস্টিওম্যালেসিয়া সাধারণত ভিটামিন-ডি কম গ্রহণ করার জন্য হয়। তাই খাবারে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করার জন্য বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত যে সব খাবার ভিটামিন-ডি’ সমৃদ্ধ। যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম ও যকৃত। সূর্যের আলো শরীরের চামড়ায় পড়লে সেখানে ভিটামিন-ডি উৎপন্ন হয়। সুতরাং রোগীকে দুপুর ১২টার আগ পর্যন্ত কিংবা বিকাল ৩টার পর রোদে রাখা। প্রতিদিন ২৫-১২৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-ডি ওষুধ হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। শরীরের চামড়ার সূর্যরশ্মি পড়লে সেখানে ভিটামিন-ডি উৎপন্ন হয়। তাই অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ থেকে অথবা শিশুদের রিকেট থেকে বেঁচে থাকার সহজ উপায় হলো শরীরে রোদ লাগানো।

 

লেখক : আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল লি. শ্যামলী, মিরপুর রোড, ঢাকা।  সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com