ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা

ছবি : সংগৃহীত

 

মাহফুজা আফরোজ সাথী : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নবজাতকসহ যে কোনো বয়সের মানুষেরই এই রোগ দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই ভাইরাসের চার ধরনের সেরোটাইপ থাকে। এডিস মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। মশা কামড়ানোর (৪-১০) দিনের মধ্যে এই ভাইরাস দেহে বংশবৃদ্ধি করে রোগের সৃষ্টি করে। সাধারণত আমাদের রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ থাকে দেড় লক্ষ থেকে চার লক্ষের মধ্যে। ডেঙ্গুর তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে এই প্লাটিলেটের পরিমাণও কমতে থাকে।

 

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সব রোগীকেই যে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন আছে তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়িতে রেখেও ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্ভব। তবে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা আগে সুনিশ্চিত হতে হবে। জ্বর আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে NS1 টেস্ট করতে হবে। যদি রিপোর্ট পজেটিভ আসে তবে CBC টেস্ট করে প্লাটিলেট কাউন্ট দেখতে হবে।৭২ ঘণ্টা পরে NS1 কখনো পজিটিভ আসে না। তাই অনেকে ভাবছেন যে, রিপোর্ট ভুল এলো। বিষয় হলো ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে NS1 নেগেটিভ হয়ে যায়। তাই তখন IgG, IgM টেস্টসহ CBC করাতে হবে।

 

ডেঙ্গুজ্বর হলে এবার প্লাটিলেট কমে যাওয়া ছাড়াও রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যাচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে হেমোরেজও হচ্ছে। আবার কারও ক্ষেত্রে প্লাটিলেট কাউন্ট কমলেও তা সহনীয় পর্যায়ে থাকছে। ডেঙ্গুজ্বরের কোনো ভ্যাক্সিন বা অ্যান্টিবায়োটিক নেই। তাই প্রচলিত চিকিৎসা হলো জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল আর ফ্লুইড ব্যালেন্স করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা। ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য ও পুষ্টির প্রতিও রাখতে হবে বিশেষ নজর।

 

যারা হাসপাতালে থাকবেন তাদের IV fluid এর পাশাপাশি মুখে তরল খাবার দিয়ে total fluid  ব্যালেন্স করতে হবে।

 

অপর পক্ষে যারা বাসায় আছেন তাদের পানিসহ অন্যান্য তরল মিলে ৩ লিটার সারাদিনে total fluid অর্থাৎ মুখে খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

 

তাড়াছা জ্বরে ক্যালোরি চাহিদা বেড়ে যায়। তাই ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি করে দিতে হবে। এ সময় মুখে রুচিও থাকে না। তাই এমন খাবার দিতে হবে যা অল্প খেলেও চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। যেমন- ভাতের পরিবর্তে খিচুড়ি, পায়েস, ফিরনি বা পুডিং দেওয়া যেতে পারে। ফলে একটা খাবার থেকেই সব উপাদান পাওয়া যাবে।

মুখে ফলের রস, ডাবের পানি, সুপ ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে।

যদি জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া ও বমি হয়ে থাকে তবে শাক- সবজি, ডাল, দুধ ও দুধে তৈরি খাবার বাদ দিতে হবে। এ অবস্থায় ডাবের পানি, মুরগির সুপ, চালের সুপ বা ভাতের মাড়, আপেলের জুস খুব ভালো কাজ করে।

মূল খাবার হিসেবে ভাত বা জাউয়ের সঙ্গে কাঁচকলার ঝোল দিলে রোগী উপকৃত হবে।

মাছ বা মাংস বন্ধ না করে সহজপাচ্য মাছ যেমন- শিং, শোল, পাবদা ইত্যাদি লোফাইবার মাছ বা মুরগির তরকারি দেওয়া ভালো।

গায়ে কোনো Rash থাকলে সাধারণ এলার্জিক খাবার যেমন- গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ ও বেগুন ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো।

পেঁপে পাতার রস খাওয়া যেতে পারে। এতে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান পাওয়া যায় যা শরীর ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 

তবে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা না করিয়ে লতাপাতা দিয়ে চিকিৎসা ঝুঁঁকিপূর্ণ বা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই জ্বরসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হোন। ডেঙ্গু প্রতিকারে এই দুটি মোক্ষম হাতিয়ার।

লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস, চট্টগ্রাম। সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিডিএস বাস্তবায়িত হলে ম্যাপ সংযুক্ত মালিকানা ভিত্তিক খতিয়ান চালু করা সম্ভব হবে – ভূমিমন্ত্রী

» বিএটি বাংলাদেশের ৫১তম এজিএম অনুষ্ঠিত

» ইসলামপুরে কৃষকরা পেল উন্নত মানের বীজ

» ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সাথে ব্র্যাক ব্যাংকের কাস্টোডিয়াল সার্ভিস চুক্তি

» এপেক্স ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্ট কাউন্সিল”এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কমিটি গঠিত

» ২ লাখ টাকার ফ্যামিলি ট্রিপের সেরা ঈদ অফার দিচ্ছে রিয়েলমি

» ঘূর্ণিঝড়ে আলফাডাঙ্গার ২২ গ্রাম বিধ্বস্ত

» প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আগামীকাল

» আইপিইউর এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের চেয়ারম্যান হলেন স্পিকার

» এক শহরের মধ্যে দুই দেশ

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা

ছবি : সংগৃহীত

 

মাহফুজা আফরোজ সাথী : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নবজাতকসহ যে কোনো বয়সের মানুষেরই এই রোগ দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই ভাইরাসের চার ধরনের সেরোটাইপ থাকে। এডিস মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। মশা কামড়ানোর (৪-১০) দিনের মধ্যে এই ভাইরাস দেহে বংশবৃদ্ধি করে রোগের সৃষ্টি করে। সাধারণত আমাদের রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ থাকে দেড় লক্ষ থেকে চার লক্ষের মধ্যে। ডেঙ্গুর তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে এই প্লাটিলেটের পরিমাণও কমতে থাকে।

 

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সব রোগীকেই যে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন আছে তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়িতে রেখেও ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্ভব। তবে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা আগে সুনিশ্চিত হতে হবে। জ্বর আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে NS1 টেস্ট করতে হবে। যদি রিপোর্ট পজেটিভ আসে তবে CBC টেস্ট করে প্লাটিলেট কাউন্ট দেখতে হবে।৭২ ঘণ্টা পরে NS1 কখনো পজিটিভ আসে না। তাই অনেকে ভাবছেন যে, রিপোর্ট ভুল এলো। বিষয় হলো ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে NS1 নেগেটিভ হয়ে যায়। তাই তখন IgG, IgM টেস্টসহ CBC করাতে হবে।

 

ডেঙ্গুজ্বর হলে এবার প্লাটিলেট কমে যাওয়া ছাড়াও রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যাচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে হেমোরেজও হচ্ছে। আবার কারও ক্ষেত্রে প্লাটিলেট কাউন্ট কমলেও তা সহনীয় পর্যায়ে থাকছে। ডেঙ্গুজ্বরের কোনো ভ্যাক্সিন বা অ্যান্টিবায়োটিক নেই। তাই প্রচলিত চিকিৎসা হলো জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল আর ফ্লুইড ব্যালেন্স করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা। ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য ও পুষ্টির প্রতিও রাখতে হবে বিশেষ নজর।

 

যারা হাসপাতালে থাকবেন তাদের IV fluid এর পাশাপাশি মুখে তরল খাবার দিয়ে total fluid  ব্যালেন্স করতে হবে।

 

অপর পক্ষে যারা বাসায় আছেন তাদের পানিসহ অন্যান্য তরল মিলে ৩ লিটার সারাদিনে total fluid অর্থাৎ মুখে খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

 

তাড়াছা জ্বরে ক্যালোরি চাহিদা বেড়ে যায়। তাই ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি করে দিতে হবে। এ সময় মুখে রুচিও থাকে না। তাই এমন খাবার দিতে হবে যা অল্প খেলেও চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। যেমন- ভাতের পরিবর্তে খিচুড়ি, পায়েস, ফিরনি বা পুডিং দেওয়া যেতে পারে। ফলে একটা খাবার থেকেই সব উপাদান পাওয়া যাবে।

মুখে ফলের রস, ডাবের পানি, সুপ ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে।

যদি জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া ও বমি হয়ে থাকে তবে শাক- সবজি, ডাল, দুধ ও দুধে তৈরি খাবার বাদ দিতে হবে। এ অবস্থায় ডাবের পানি, মুরগির সুপ, চালের সুপ বা ভাতের মাড়, আপেলের জুস খুব ভালো কাজ করে।

মূল খাবার হিসেবে ভাত বা জাউয়ের সঙ্গে কাঁচকলার ঝোল দিলে রোগী উপকৃত হবে।

মাছ বা মাংস বন্ধ না করে সহজপাচ্য মাছ যেমন- শিং, শোল, পাবদা ইত্যাদি লোফাইবার মাছ বা মুরগির তরকারি দেওয়া ভালো।

গায়ে কোনো Rash থাকলে সাধারণ এলার্জিক খাবার যেমন- গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ ও বেগুন ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো।

পেঁপে পাতার রস খাওয়া যেতে পারে। এতে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান পাওয়া যায় যা শরীর ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 

তবে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা না করিয়ে লতাপাতা দিয়ে চিকিৎসা ঝুঁঁকিপূর্ণ বা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই জ্বরসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হোন। ডেঙ্গু প্রতিকারে এই দুটি মোক্ষম হাতিয়ার।

লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস, চট্টগ্রাম। সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com