কৃষকের মাথায় হাত

বন্যার কারণে চলতি বছর আউশ ধানের ক্ষতি হওয়ার পর সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে এবার ঝুঁকিতে পড়েছে আমন ও বোরো মৌসুম। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ বিপদে পড়েছে কৃষক। অনেকেই ধানের আবাদ বাদ দিয়ে সবজি ও ভুট্টা চাষের চিন্তা করছেন। এতে চলতি অর্থ বছরে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনটা হলে দেশের চালের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

 

১ আগস্ট ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা ও ৫ আগস্ট ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়। ডিজেলের দাম বাড়ায় শুধু সেচের কারণে এখন কৃষির ব্যয় বাড়ছে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া বাড়ছে যন্ত্রের মাধ্যমে মাড়াই ও পরিবহন খরচ। অন্যদিকে ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোয় প্রতি বিঘা (বোরো ও আমন) আবাদে ইউরিয়া সারে খরচ বাড়ছে অন্তত ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে কৃষক বছরে ইউরিয়া সারে খরচ করে ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা গিয়ে দাঁড়াবে ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকায়। তথ্যানুযায়ী, দেশের ৬০ শতাংশের বেশি চালের জোগান আসে বোরো মৌসুমে। আর শুধু ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতেই প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় বাড়বে দেড় থেকে দুই টাকা। ফলে ঝুঁকিতে পড়তে পারে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন।

 

কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, কৃষিকাজে বছরে ৯ লাখ ৭২ হাজার টন ডিজেল ব্যবহার হয়। এতে কৃষকের খরচ হয় ৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। নতুন করে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বাড়ানোয় এখন ব্যয় হবে ১১ হাজার ৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকের ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বোরো মৌসুমে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয় বেশি। প্রতি কেজিতে ৬ টাকা বাড়ায় বোরো আবাদে শুধু ইউরিয়া সারের খরচ বাড়ছে ৩৭ শতাংশ। এদিকে ১৩ বছর ধরে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রতি বছর আমদানি করতে হচ্ছে। খাদ্য হিসেবে আড়াই কোটি টন চালের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হচ্ছে পৌনে ৪ কোটি টনের বেশি। তবুও বর্তমানে রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। অন্যদিকে উৎপাদন খরচ না ওঠায় গত কয়েক বছর ধরেই ধানের আবাদ ছেড়ে অন্য ফসলে ঝুঁকছে কৃষক। কমছে ধানের জমি। নীলফামারী জেলায় গত বছর ২৩ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হলেও চলতি বছর ভুট্টার জমি ২ হাজার হেক্টর বেড়েছে।

 

চলতি বছর বন্যায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কমেছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন চাল। বৃষ্টিপাত না হওয়া ও লোডশেডিংয়ে সেচ দিতে না পারায় চলতি আমন মৌসুমেও উৎপাদন কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে খোদ কৃষিমন্ত্রী আমন উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমন চাল উৎপাদনের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৌসুম। খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আমন রোপণ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেশি। লোডশেডিংয়ে সেচ সংকট তৈরি হয়েছে। দেরিতে লাগানো আমনের খেত সেচের অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সেজন্য আমন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।’ এর মধ্যে চলতি মাসে সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে আগামী নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বোরো মৌসুম নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, বোরো মৌসুম পুরোটাই সেচনির্ভর। আর ৬০ শতাংশ চাল আসে বোরো থেকে। ৩৭ হাজার গভীর নলকূপ, ১৩ লাখ অগভীর নলকূপ থেকে সেচ হয়। সব মিলে ১৫ লাখ কৃষি যন্ত্রপাতি আছে, যার ৭৫ শতাংশই ডিজেলচালিত। ডিজেলের দাম বাড়ায় বিঘাপ্রতি সেচের খরচ বাড়বে ৭০০ টাকা। পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর ব্যবহারে খরচ বাড়বে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া ইউরিয়ার দাম বাড়ানোর কারণে খরচ বাড়বে ৫০০ টাকা। বৃষ্টি না হওয়ায় ৩০ শতাংশ জমিতে আমন চাষ হচ্ছে না। সব মিলে ধানের উৎপাদনে বড় আঘাত আসতে পারে। তবে সেচ কাজে ডিজেল ব্যবহারে এবার কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।  সূএ:বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ফেরত যাবে মিয়ানমারের ২৮৫ সেনা, ফিরবে ১৫০ বাংলাদেশি

» ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী তিন যুবক নিহত

» কৃষক লীগকে শহরে আটকে না রেখে গ্রামে নিয়ে যাওয়া ভালো: কাদের

» গণভবনের শাক-সবজি কৃষক লীগ নেতাদের উপহার দিলেন শেখ হাসিনা

» হাওরে কৃষকদের বোরো ধানের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী

» বাসচাপায় সিএনজি যাত্রী নিহত

» ‌‌‘বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা’

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

» বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রাজনৈতিক নয়: প্রধানমন্ত্রী

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের ভবনে আগুন

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কৃষকের মাথায় হাত

বন্যার কারণে চলতি বছর আউশ ধানের ক্ষতি হওয়ার পর সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে এবার ঝুঁকিতে পড়েছে আমন ও বোরো মৌসুম। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ বিপদে পড়েছে কৃষক। অনেকেই ধানের আবাদ বাদ দিয়ে সবজি ও ভুট্টা চাষের চিন্তা করছেন। এতে চলতি অর্থ বছরে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনটা হলে দেশের চালের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

 

১ আগস্ট ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা ও ৫ আগস্ট ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়। ডিজেলের দাম বাড়ায় শুধু সেচের কারণে এখন কৃষির ব্যয় বাড়ছে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া বাড়ছে যন্ত্রের মাধ্যমে মাড়াই ও পরিবহন খরচ। অন্যদিকে ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোয় প্রতি বিঘা (বোরো ও আমন) আবাদে ইউরিয়া সারে খরচ বাড়ছে অন্তত ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে কৃষক বছরে ইউরিয়া সারে খরচ করে ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা গিয়ে দাঁড়াবে ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকায়। তথ্যানুযায়ী, দেশের ৬০ শতাংশের বেশি চালের জোগান আসে বোরো মৌসুমে। আর শুধু ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতেই প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় বাড়বে দেড় থেকে দুই টাকা। ফলে ঝুঁকিতে পড়তে পারে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন।

 

কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, কৃষিকাজে বছরে ৯ লাখ ৭২ হাজার টন ডিজেল ব্যবহার হয়। এতে কৃষকের খরচ হয় ৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। নতুন করে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বাড়ানোয় এখন ব্যয় হবে ১১ হাজার ৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকের ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বোরো মৌসুমে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয় বেশি। প্রতি কেজিতে ৬ টাকা বাড়ায় বোরো আবাদে শুধু ইউরিয়া সারের খরচ বাড়ছে ৩৭ শতাংশ। এদিকে ১৩ বছর ধরে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রতি বছর আমদানি করতে হচ্ছে। খাদ্য হিসেবে আড়াই কোটি টন চালের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হচ্ছে পৌনে ৪ কোটি টনের বেশি। তবুও বর্তমানে রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। অন্যদিকে উৎপাদন খরচ না ওঠায় গত কয়েক বছর ধরেই ধানের আবাদ ছেড়ে অন্য ফসলে ঝুঁকছে কৃষক। কমছে ধানের জমি। নীলফামারী জেলায় গত বছর ২৩ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হলেও চলতি বছর ভুট্টার জমি ২ হাজার হেক্টর বেড়েছে।

 

চলতি বছর বন্যায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কমেছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন চাল। বৃষ্টিপাত না হওয়া ও লোডশেডিংয়ে সেচ দিতে না পারায় চলতি আমন মৌসুমেও উৎপাদন কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে খোদ কৃষিমন্ত্রী আমন উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমন চাল উৎপাদনের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৌসুম। খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আমন রোপণ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেশি। লোডশেডিংয়ে সেচ সংকট তৈরি হয়েছে। দেরিতে লাগানো আমনের খেত সেচের অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সেজন্য আমন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।’ এর মধ্যে চলতি মাসে সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে আগামী নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বোরো মৌসুম নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, বোরো মৌসুম পুরোটাই সেচনির্ভর। আর ৬০ শতাংশ চাল আসে বোরো থেকে। ৩৭ হাজার গভীর নলকূপ, ১৩ লাখ অগভীর নলকূপ থেকে সেচ হয়। সব মিলে ১৫ লাখ কৃষি যন্ত্রপাতি আছে, যার ৭৫ শতাংশই ডিজেলচালিত। ডিজেলের দাম বাড়ায় বিঘাপ্রতি সেচের খরচ বাড়বে ৭০০ টাকা। পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর ব্যবহারে খরচ বাড়বে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া ইউরিয়ার দাম বাড়ানোর কারণে খরচ বাড়বে ৫০০ টাকা। বৃষ্টি না হওয়ায় ৩০ শতাংশ জমিতে আমন চাষ হচ্ছে না। সব মিলে ধানের উৎপাদনে বড় আঘাত আসতে পারে। তবে সেচ কাজে ডিজেল ব্যবহারে এবার কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।  সূএ:বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com