বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি পণ্য বোঝাই ট্রাক জিম্মি করে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বেনাপোলে কর্মরত এক শ্রেণির পরিবহন শ্রমিক। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে মাসে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করছে তারা। সিরিয়ালের নামে ইচ্ছাকৃত বেনাপোল বাইপাস সড়ক থেকে রপ্তানি গেট পর্যন্ত কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে রাখে এই চক্রটি।
বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন এ বন্দর থেকে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ২শ’ থেকে ২৩০ ট্রাক পণ্য প্রবেশ করে। তেমনি ভারত থেকে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দরে ৪শ’ থেকে ৪৫০ ট্রাক পণ্য প্রবেশ করে।
তারপর সংশ্লিষ্ট ট্রাক ড্রাইভার ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে শুরু হয় দর কষাকষি। ট্রাক প্রতি সর্বনিম্ন ৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা নিয়ে থাকে শ্রমিক নামধারি চক্রটি। টাকা না দিলে দিনের পর দিন রপ্তানিকৃত পণ্য নিয়ে রাস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে ট্রাক। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের টাকা দিয়ে পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে হয়।
বেনাপোল বন্দরের রপ্তানি গেট এলাকায় গত বুধবার সকালে সরজমিন গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেলে এই চক্রটি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ট্রাক ড্রাইভার বলেন, বেনাপোলের বড়আঁচড়া গ্রামের আবু সাঈদের নেতৃত্বে তবিবর, তরিকুল শুকুর আলী ও নজরুল ইসলাম নজুসহ একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে এখানে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে। যা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পেছন থেকে তাদের সহযোগিতা করে বেনাপোল, শার্শা ও বাগআঁচড়া নিয়ে গঠিত কথিত ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ঘেনা মোড়ল ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন।
বেনাপোলের এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মচারী মফিজুর রহমান জানান, বেনাপোল বন্দরের ট্রাক শ্রমিকদের কাছে রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জিম্মি। তাদের টাকা না দিলে দিনের দিন ভারতে রপ্তানিকৃত পণ্য বোঝাই ট্রাক প্রবেশ করানো যাবে না। নির্ধারিত সময়ে ট্রাক ভারতে ঢোকাতে না পারলে যেমন ট্রাক ড্যামারেজ দিতে হয়, তেমনি আবার রয়েছে শিপমেন্টের ঝামেলা। সঠিক সময়ে ভারতে পণ্য না পৌঁছালে আমদানিকারকরা পণ্য নিতে চায় না। এ কারণে আনেকটা বাধ্য হয়ে স্থানীয় শ্রমিক নেতাদের ট্রাক প্রতি ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা দিতে হয়।
এ ব্যাপারে বেনাপোল, শার্শা ও বাগআঁচড়া এলাকা নিয়ে গঠিত ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ঘেনা মোড়ল জানান, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ট্রাকপ্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করে থাকি। তার বাইরে কোনো টাকা আদায় করা হয় না।মানবজমিন